রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে ও রোজার গুরুত্বপূর্ণ হাদিস জানুন
প্রিয় পাঠক রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে ও রোজার গুরুত্বপূর্ণ হাদিস জানুন। হিজরি সনের সবগুলো মাসের মধ্যে এই মাসটি হলো সর্বোত্তম, বরকতময় ও অনেক মর্যাদাশীল বাকি ১১ মাসের থেকে। সেই জন্য মুমিন বান্দারা এই রমাজন মাসে বেশি বেশি আল্লাহর ইবাদতে মসগুল থাকে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আসায়। মুসলিম উম্মাহর সর্বস্রেষ্ঠ ইবাদতের মাস হচ্ছে রমজান।
রমজান মাস রহমত, নাজাত, ও মাগফিরাত এই তিন ধাপে আল্লাহ সৃষ্টি করেছেন। এত পবিত্র একটি মাস পেয়েও যে সকল বান্দারা স্বীয় পরিমান গুনাহ মাফ করাতে পারলনা সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে। সেই ব্যাক্তিদের জন্য জীবরাইল আ. বদদু আ করেন। আসুন সে সম্পর্কে নিচে বিস্তারিত জেনে নিই।
ভূমিকা
আরবি রমাদান কথার আবিধানিক অর্থ হচ্ছে সিয়াম সাধণা করা বা রোজা রেখে মহান আল্লাহর ইবাদত করা। মুমিন বান্দারা সুবএহ সাদিক এর পর থেকে সূর্য-অস্থ্য পর্যন্ত্য কোন ধরনের খাবার পানাহার না করে ইফতারের শেষ মুহুর্তে কিছু খানা খাই একমাত্র মহান আল্লাহর ভয়ে। রমজান অর্থ ও রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে নিচে ভালো ভাবে যেনে নিন।
রমজান মাসের ফজিলত সম্পর্কে
প্রাচিন ইসলামি যুগে রমজান মাসের নাম ছিল তাছাবুক যার অর্থ "পূর্বাহ্নে শাণিত করা" আরবের লোকেরা অন্ধকার যুগে এই মাস শেষ হবার আগেই তদের অস্ত্র ও হাতিয়ারকে শাণিত বা ধার করে /*-+*/নেয় যাতে শাওয়াল মাসে শ্ত্রুর মোকাবেলা করতে পারে নির্বিঘ্নে। কারন এই মাসের ফজিলত অনেক বেশি। এই মাসে আল্লাহর বান্দারা একমাত্র রবের ভয়ে
বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মাদ ( সা. ) বলেছেন যে রমজান মাস তোমাদের কাছে এতই পবিত্র যে এই মাসের প্রথম ১০ দিন রহমতের বৃষ্টি ধারাই পরিপূন্য থকে। এবং দ্বীতিয় ১০ দিন আল্লাহর কাছে বান্দাদের ক্ষমা ও মার্জনা চাওয়ার জন্য নির্ধারিত হয়েছে।
আরও পড়ুনঃ মেয়েদের ইসলামিক অর্থসহ নাম
এবং শেষের ১০ দিন বান্দাদের জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের জন্য নির্বাচিত করেছে। এই মাস রহমত,মাগফিরা ও নাজাত এই তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আসায় বান্দারা এই মাসে রোযা থাকা অবস্থায় বেশি বেশি ইবাদত করে। রমযান মাসের ফজিলত সম্পর্কে পবিত্র কোরান ও হাদিছে ফজিলত পূর্ন বানি উল্লেখ করা আছে।
মহান আল্লাহ তার ঈমানদার বান্দাদের বলেন যে তোমাদের উপর রোযা ফরজ । ঠিক যেমন টা ছিল তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মতদের উপর। মহান আল্লহ বলেন যে রোযাদার ব্যাক্তির মূখের গন্ধ আল্লাহ-তায়ালার কাছে মেশকের চাইতেও বেশি সুঘ্রান যুক্ত।
রোজার গুরুত্বপূর্ণ হাদিস জানুন
রমজানের রোজা জান্নাত লাভের সর্বোত্তম উপায়। জান্নাতের রাইয়ান নামের দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে জান্নাতি ব্যাক্তিরা। এই মাস হল মুমিন বান্দাদের গুনহা মোচনের সর্বোত্তম মাধ্যম। মুমিন বান্দাদের জন্য কিয়ামতের দিন শুপারিশ করবে রোজা। মহান আল্লাহ এই রোজার পুরষ্কার দান করবেন নিজ হাতে। রোজাদার ব্যাক্তিরা বেশি বেশি আখিরাতের চিন্তা করায়।
রমজান মানুষকে ভ্রাতৃত্ব বোধের ও স্বমাজিকতা এবং সহমর্মিতায় আকৃষ্ট করে। রমজান মহান আল্লাহ এবং বান্দার মধ্যে গোপন একটি ইবাদত যার মহান আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে সম্পর্কের দৃড়তা সৃষ্টি হয়।পবিত্র কোরানের সূরা আল-বাকারার একশ পৈচায়াশি নম্বর আয়াতে মহান আল্লহ ইরশাদ করেছেন। তোমাদের মধ্য যে ব্যাক্তি এই মাসকে পাবে সে ব্যাক্তি অবশ্যই যেন রোজা রাখে।
রমজানের ফজিলত এবং মর্যাদা নিয়ে বিভিন্ন কিতাবে বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত আছে। যার কিছু অংশ দেওয়া হল-বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মাদ ( সা. ) বলেছেন জান্নাতের মোট ৮ টি দরজা আছে। যার মধ্যে একটি দজার নাম হচ্ছে রাইহান। রোজাদার ব্যাক্তি ছাড়া অন্য কেও এই দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে না। এই হাদিস টি বর্ণিত হয়েছে ইবনে সা'দ ( রা. ) থেকে।
( বুখারি, মুসলিম )বিশ্বনবির হজরত মোহাম্মাদ ( সা. ) এক সাহাবি আবু হুরায়রা ( রা. ) থেকে বর্ণিত হয়েছে হজরত মোহাম্মাদ ( সা. ) বলেছেন যে রমজান মাস আসলে আসমানের সবগুলো দরজা খুলে দেয় এবং জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়, ও শয়তান কে শৃকল দ্বারা বেধে রাখা হয়। ( বুখারী, মুসলীম )বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা ( রা. ) আরও বর্ণনা করেন।
যে বিশ্ব নবি হজরত মোহাম্মাদ ( সা. ) বলেন কোন ব্যাক্তি এই মাসে রোজা রাখে ইমানী শক্তি ও সওয়াবের আসায় সে ব্যাক্তির পূর্বের সকল গুনাহ মাফ করে দেন মহান আল্লাহ। এবং যে ব্যাক্তি এই মাসে রাতে ইবাদত করে সওয়াবের নিয়তে তার সম্পুর্ন গুনাহ মাফ করে দেয় মহান আল্লাহ। এই মাসে লাইলাতুল-কদরের রাতে যে ব্যাক্তি সওয়াবের আসায় ইবাদত করে তার পুর্বের সমস্থ গুনাহ মাফ করে দিবেন মহান আল্লাহ। ( বুখারী, মুসলিম )
রোজার ফজিলত সম্পর্কে জানুন
আরবি বছরের মধ্যে সব চাইতে সেরা ও সর্বোত্তম মাস হচ্ছে রমজান। রোজার ফজিলত সম্পর্কে জানুন। রমজান মাসে সব থেকে বেশি গুরুত্বপূন্য ইবাদত হচ্ছে রোজা । মহান আল্লাহর অনেক প্রিয় একটি ইবাদত রোজা। আর এই রোজার প্রতিদান মহান আল্লাহ নিজ হাতেই দিবেন তার বান্দাদের। এই রোজার ফজিলত,নেয়ামত,ও মর্যাদা সম্প্রকৃত বিভিন্ন হাদিস বর্ণিত রয়েছে। এ সম্প্রর্কে কিছু হাদিস নিচে দেয়া হল
বিখ্যাত সাহাবি আবু হুরায়রা ( রা. ) বর্ণনা করেছেন যে বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মাদ ( সা. ) ইরশাদ করেন যে মহান আল্লাহ বলেন , "আদম সন্তানদের প্রত্যেকটি আমল তাদের নিজেদের জন্য একমাত্র রোজা ব্যাতীত। রোজার পুরষ্কার আমি নিজে দেব আমার বান্দাদের এর কারন রোজা আমার জন্যই। "বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মাদ ( সা. ) আরও বলেছেন যে রোজা মুমিন বান্দাদের ঢাল স্বরুপ।
তিনি আরও বলেন তোমাদের মধ্যে যেন কেউ সিয়াম পালনের সময় অস্লিলতাপূন্য কাজে লিপ্ত হয় না এবং কোন ধরনের ঝগড়া, বিবাদ করে না। কেউ যদি কোন রোজাদার ব্যাক্তিকে গালি দেই বা ঝগড়া করে তাহলে সেই ব্যাক্তি বলে যেন আমি রোজাদার ব্যাক্তি। অবশ্যই রোজাদার ব্যাক্তির মুখের গন্ধ মহান আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধির চাইতেও বেশি সুঘ্রানযুক্ত।
রমজানের ছোট ছোট হাদিস
রমজানের ছোট ছোট হাদিস সমূহ। রোজাদার ব্যাক্তির ২ টি খুশির মুহর্ত হচ্ছে , সে যখন ইফতার করে ,তখন সে অনেক হয় খুশি এবং সে যখন মহান আল্লাহর সাথে শাক্ষাৎ করবে তার রোজার বিনিময়ে ( বুখারি, ১৯০৪ হাদিস )হুজায়ফা ( রা. ) বলেন যে বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মাদ ( সা. ) বলেন যে মানুষের পরিবার , প্রতিবেশি ও ধন সম্পদের ব্যাপারে ঘটিত অনেক ফিতনা ও গুনাহ থেকে মুক্তির কাফফারা
হল নামাজ, রোজা এবং সদাকা । ( বুখারি, ১৮৯৫ হাদিস )আবু সাইদ ( রা. ) থেকে বর্ণিত বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মাদ ( সা. ) বলেছেন যে মহান আল্লাহ বলেন আমার বান্দা যদি আমার রাস্তায় একদিন রোজা থাকবে, তাহলে আমি সেই বান্দাকে ৭০ বছরের জাহান্নামের পথ থেকে দূরে রাখব। ( বুখারি, ২৮৪০ হাদিস )হুজায়ফা ( রা. ) বর্ণনা করেছেন
যে বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মাদ ( সা. ) একদা আমার বুকে হেলান দিয়ে সুয়ে ছিলেন। সে অবস্থায় তিনি বলেন "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলার পর যে বান্দা মৃত্যু বরন করবে, সে ব্যাক্তি জন্নাত লাভ করবে। যখন কোন বান্দা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার পর যদি ঔই ব্যাক্তি মৃত্যু বরন করে তাহলে সে ব্যাক্তি সরাসরি জান্নাত লাভ করবে।
যদি কোন বান্দা আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহর রাস্তায় বেশি বেশি দান সদকা করার পর মৃত্যু বরন করে তাহলে সে ব্যাক্তি ও জান্নাত লাভ করবে। ( মুসনাদে আহমদ, ৯৭২ হাদিস )
রমজান অর্থ কি
আরবি বর্ষের নবম তম মাসকে মহান আল্লাহ-তায়ালা ''রমজান'' নামে নাম করন করেছেন। রমজান অর্থ কি পবিত্র কোরানের সূরা আল-বাকারার ১৩৫ নম্বর আয়াতে এই নামটি এসেছে মাত্র একবার। পবিত্র কোরানের সূরা আল-বাকারা বাদে আরও ১১৩ টি সূরা আছে কিন্তু সূরা গুলোর কোথাও আর এই নামের উল্লেখ নেই। এর উল্লেখ বাকি সূরা গুলোতে কেন পাওয়া যায় নি তার যতার্থতা
একমাত্র মহান আল্লাহ ভালো যানেন। তবে এই দুনিয়ার আলেম ওলামাদের মহান আল্লাহ সত্য ও সঠিক জ্ঞ্যান অনুধাবন এবং তা সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করার যে নেয়মত দিয়েছেন এতে তারা রমযান শব্দের অর্থ সঠিক ভাবে বিশ্লেষণ করতে সক্ষম হয়েছে।আসুন সে বিষয়ে কিছু যানা যাক ।
কারন রমযান মাসে রোজা রাখার সময় বান্দারা ক্ষুধার জালায় ও তীব্র পিপাসায় ভস্মিত হয়ে কাতরাতে থাকে। রোযাদার ব্যাক্তিরা এই মাসে এই ক্ষুধা ও তীব্র পিপাসার কষ্ট অনুভব করে বলেই এই মাসটির নাম করন করা হয়েছে এই মাস ।
এবং রামাযা ধাতু শব্দ থেকে রামাযাউ শব্দটির উৎপন্ন হয়েছে। এই মাসে আল্লাহর বান্দারা রোজা অবস্থায় যেসব ইবাদত ও আমল করে, তা তাদের পূর্ববর্তী পাপ গুলোকে ধংস করে ফেলে । বিশ্ব নবি হযরত মোহাম্মাদ ( সাঃ ) এই কথাটি বলেছেন । আর যার দরুন এই মাসটির নাম রমজান দেওয়া হয়েছে ( ''সহীহ বোখারি হাদিস'' )।
কিছু কিছু বিশ্লেষক এইরকম মতবাদ দিয়েছেন যে আরবি ১২ মাসের নাম করনের সময়টিতে সূর্যের তাপ অনেক তীব্র ছিল যার দরুন সেই সময় সবকিছুর দহন এবং জলন অনেক বেশি ছিল।
রমজানের ফজিলত ও করণীয়
রমজান মাস অনেক পবিত্র একটি মাস। এবং বিশ্বনবি হযরত মোহাম্মাদ ( সা. ) এর উপর ওহী নাজীল হয় এ মাসেই সর্বোপ্রথম। পবিত্র কোরান নাজিল হয় এই মাসে আর সে জন্য বান্দাদের সথপথে চলার
রমজান মাস আসলে রহমতের সবগুলো দরজা খলে দেন মহান আল্লাহ। এই মাস শুরু হলে রহমতের সব দরজা খুলে দেন মহান আল্লাহ। হাদিসে এসেছে। ( সহীহ মুসলিম, ১০৭৯/২ হাদিস )রমজান মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের মাস । রমজানের ফজিলত ও করণীয়
এই মাসে ইস্তেগফার ও ইবাদত বেশি বেশি করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করা যায়। হাদিসে এসেছে মহান আল্লাহ ইফতারের সময় অনেক বান্দাকে জাহান্নাম হতে মুক্তি দিয়ে দেই। ( মুসনাদে আহমদ, ২১৬৯৮ হাদিস )
লেখকের মন্তব্য
রমজান মাস অনেক ফজিলত পূর্ন একটি মাস। এই মাসে মহান আল্লাহ বান্দাদের নিজে পুরষ্কার প্রদান করবেন রোজা রাখার জন্য। এই মাসে শইতান কে বেধে রাখে মহান আল্লাহ শৃকল দ্বারা। এই মাসের ফজিলত সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানলাম । উপরোক্ত আলোচনার উপর ভিত্তি করে আমরা মহান আল্লাহর বেশি বেশি ইবাদত করব।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url