যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য কত-যমুনা সেতুর পিলার কয়টি
প্রিয় পাঠক যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য কত ও যমুনা সেতুর পিলার কয়টি সঠিক তথ্য জেনে নিন। এই সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৩ হাজার ৭৪৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এবং জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হয়েছিল ১৯৯৮ সালের জুন মাসে। এই সেতু নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৫ বছরের মধ্যেই। নির্মাণ ব্যয়ের সমস্ত খরচ তুলে আনা হবে ।
তবে নির্ধারিত সময়ের ৭ মাস আগে ২০২১-২২ অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত মোট টোল আদায় হয়েছিল ৭ হাজার ৭৪ কোটি ৫৯ লক্ষ্য টাকা। যা ২৪ বছর ২৮৭ মাস ব্যায়ে ৩ হাজার ৩২৮ কোটি ৯৯ লক্ষ্য টাকা বেশি পরিমাণে টোল আদাইকৃত হয়েছে ।
ভূমিকা
বাংলাদেশে বৃহত্তর যমুনা নদীর উপরে নির্মিত এই সেতুটির নাম যমুনা সেতু। বাংলাদেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু এটি। পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ ও পূর্বে টাঙ্গাইলের ভুঁইয়াপুর এর মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে ঢাকার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো উন্নত করেছে । ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু সেতু এ সম্পর্কে জানতে আরও পড়ুন ।
যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য কত
যমুনা সেতু বাংলাদেশের বৃহত্তর ও যমুনা নদী উপরে নির্মিত। এটি একটি সড়ক কাম-রেল সেতু। সেতু নির্মাণের জন্য সর্বপ্রথম উদ্যোগ নিয়েছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৪৯ সালে। ১৫ ই অক্টোবর ১৯৯৪ সালে এই সেতু নির্মাণের মূল কাজ প্রথম শুরু হয়েছিল। এবং ২৩ শে জুন ১৯৯৮ সালে এই সেতু জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল ।
আরও পড়ুনঃ পদ্মা সেতুর দৈর্ঘ কত
যাতে তারা যানবাহন নিয়ে এই সেতুর উপর দিয়ে চলাচল করতে পারে। পশ্চিমে সিরাজগঞ্জ ও পূর্বে টাঙ্গাইলের ভূঁইয়াপুর এর মধ্যে সংযোগস্থল তৈরি করেছেন। যার কারণে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের সবগুলো জেলার যাতায়াত ব্যবস্থা আরো দৃঢ় হয়েছে। এই সেতুর দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার। এই সেতু নির্মাণ করেছিলেন হুন্দাই হেভি কোম্পানি লিমিটেড।
যমুনা সেতুর পিলার কয়টি
৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুটি পদ্মা সেতু তৈরি হওয়ার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের সব থেকে বড় সেতু ছিল। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেতু। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এ সেতুটি ৭ম দীর্ঘতম সেতুর স্থানে রয়েছে এবং পৃথিবীর মধ্যে ১২৩ তম দীর্ঘতম সেতুর স্থানে রয়েছে । যমুনা সেতুর মোট ৬টি লেন আছে যার মধ্যে বাইসাইকেল
আরও পড়ুনঃ পদ্মা সেতুর পিলার সংখ্যা কয়টি
ও পথচারী মানুষের রাস্তার জন্য আলাদা একটি লেন আছে। যমুনা সেতুর মোট পিলার সংখ্যা ৫০ টি ও মোট স্প্যান সংখ্যা ৪৯ টি। এই সেতুতে মোট পাইলিং করা হয়েছিল ১২১ টি। এই সেতুর মোট আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিল ১০০ বছর। এই সেতু থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট টোল আদায় হয়েছিল ৭ হাজার ৭৪ কোটি ৫৯ লক্ষ টাকা।
২০০৩ সালের ১৪ আগস্ট থেকে যমুনা সেতুর উপর দিয়ে উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। ২০০৩ সালে এই সেতুতে একটি ছোট ফাটলের সৃষ্টি হয়েছিল এবং ২০০৮ সালে এই ফাটলের অবস্থান ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছিল।
যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত পড়ে নিন
যমুনা বা বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মিত হয়েছে যমুনা নদীর উপরে। যমুনা সেতুর দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কত পড়ে নিন বাংলাদেশের প্রধান বড় তিনটি নদীর মধ্যে যমুনা নদী অন্যতম এবং পানি প্রবাহের দিক থেকে পৃথিবীতে পঞ্চম স্থানে রয়েছে । পূর্বে যমুনা সেতুর বঙ্গবন্ধুর নামকরণ অনুসারে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু সেতু নামে নাম দেওয়া হয়। যমুনা নদী মোট ৩.৫ কিলোমিটার প্রস্থ।
আরও পড়ুনঃ পদ্মা সেতু বিশ্বের কততম সেতু
এ বিষয়টি এবং বন্যা ও ভূমিকম্পের দুর্যোগের কথা চিন্তা করে এর প্রশস্ততা বৃদ্ধি করে মোট ৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতু নির্মাণের জন্য বিবেচিত হয় । সম সাময়িক কিছু কাজ করার পরে ১৯৯৫ সালে এই সেতুটির মূল কাঠামো ৪.৮ কিলোমিটার দীর্ঘ বলে চূড়ান্তভাবে প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়। এবং এই সেতুর প্রস্থ ১৮.৫ মিটার।
এর নির্মাণ ব্যয় $৯৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার । এই সেতু থেকে ঢাকার অবস্থান প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে। এই সেতুটি সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলাতে অবস্থিত।
যমুনা সেতু কত সালে চালু হয় জেনে নিন
যমুনা সেতু কত সালে চালু হয় জেনে নিন। ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনেক দূর দুরান্তের লোকজন যাতায়াত করত। কিন্তু তাদের ফেরিতে অনেক কষ্ট নিয়ে যাতায়াত করতে হতো। সেজন্য আপামর
জনতার দুঃখ কষ্টের কথা মাথায় রেখে বাঙালির সর্বকালের শ্রেষ্ঠ নেতা মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৯৪৯ সালে এই সেতুটি নির্মাণের দাবি উত্থাপন করেছিলেন। এবং পরবর্তী সময়ে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনি ইশতেহারে এ সেতুর নির্মাণের কথা উল্লেখ ছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায়
সাধারণ জনতার উদ্দেশ্যে টেলিভিশন ও বেতারে ভাষণ দিয়েছিলেন যে তার দল ক্ষমতায় গেলে এই সেতু নির্মিত হবে। এইটা আমার ওঁয়াদা। ১৯৮৫ সালে ৩ জুলাই সে সময়ের রাষ্ট্রপতির আধ্যাদেশে গঠিত হয় যমুনা সেতু নির্মাণের কর্তৃপক্ষ। তবে ১৫ই অক্টোবর ১৯৯৪ সালে এই সেতু নির্মাণের মূল কাজ শুরু হয়েছে এবং ২২ জুন ১৯৯৮ সালে এই সেতু নির্মাণের সবগুলো কাজ শেষ হয়েছে
এবং ২৩ শে জুন ১৯৯৮ সালে সাধারণ জনতার যান চলাচলের জন্য এই সেতুটি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এতে ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোর সম্পর্ক আরো দৃঢ় হয়েছে। এই সেতু নির্মিত হওয়ার আগে ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে যেতে সময় লাগতো প্রায় ১২ ঘণ্টা এখন এই সেতু হওয়ার বদলৌতে মোট ৬ থেকে ৭ ঘন্টার মধ্যেই ঢাকা খুব সহজেই পৌঁছে যাচ্ছি আমরা।
যমুনা সেতুর উদ্বোধন করেন কে সঠিক তর্থ্য জানুন
যমুনা সেতুর উদ্বোধন করেন কে সঠিক তর্থ্য জানুন । উপনিবেশিক শাসনামলের সময় ১৯৪৯ সালে যমুনা নদীর উপরে সেতু নির্মাণের জোর দাবি উত্থাপন করেছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী। ১৯৬৪ সালের ৬ জানুয়ারি নির্বাচনে নির্বাচিত সংসদ সদস্য রংপুরের মোহাম্মদ সাইফুর রহমান সংসদের প্রাদেশিক পরিষদে একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন যে যমুনা নদীর
উপরে কোন সেতু নির্মাণের ইচ্ছা আছে নাকি। এর দুই বছর পরে রংপুরের আরেকজন সংসদ সদস্য ১১ জুলাই ১৯৬৬ সালে এই সেতু নির্মাণের জন্য প্রস্তাব পেশ করেন এবং তা সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ যোগ্যতা পায়। ফ্রী ম্যান ফক্স এন্ড পার্টনারস নামক যুক্তরাজ্যের একটি প্রতীষ্ঠান ১৯৬৯ সালে এই সেতু নির্মাণের প্রাথমিক সম্ভ্যবতা পরীক্ষা চালান। তারা ১৭৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যায়ে একটি সড়ক কাম-রেল সেতু
নির্মাণের সুপারিশ দিয়েছিলেন।তবে এই সমীক্ষাটি ছিল প্রাথমিক পর্যায়ের। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তানের যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭০ সালে টেলিভিশন ও বেতারের মাধ্যমে। তিনি বলেন আমার দল এইবার নির্বাচিত হলে এই সেতু নির্মিত হবে এটা আমার ওঁয়াদা।
এরপরে ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে যমুনা নদীর উপর সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন। এবং ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালের বাজেটে সেতু নির্মাণের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে বাংলাদেশ সরকারের নিমন্ত্রণে ১৯৭৩ সালের জাপানের আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকা যমুনা নদীর উপর
একটি রেল কাম সড়ক সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেয়। এবং ১৯৭৬ সালে তাদের এই প্রকল্পের পরীক্ষা প্রাথমিক পর্যায়ে ঘোষিত করেন যে এই সেতু নির্মাণে মোট $৬৮৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয় হবে। সে সময় বিভিন্ন ধরনের অর্থনৈতিক মুনাফা ও প্রযুক্তিগতভাবে লাভজনক না হয় এ প্রকল্প টি পরিতক্ত হিসেবে থাকে। বেশ কয়েক বছর পর ১৯৮২ সালে সালে
যমুনা প্রকল্প আবার পুনুরুজ্জীবিত । ১৯৮৬ সালে এই সেতু নির্মাণের প্রথম সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এবং দ্বিতীয় পর্যায়ের সমীক্ষা পরিচালিত হয়।সে সময় দেখা যায় এই সেতুটি রেল-কাম সড়ক-কাম বিদ্যুৎ লাইন পরিবাহী সেতু যা প্রযুক্তিগত ও অর্থনীতিক ভাবে লাভজনক হিসেবে বিবেচিত হয়। পরে এই সেতু নির্মাণে
বাস্তববাদিত ঋণ প্রকল্প প্রণোদনা দিতে রাজি হয়েছেন ADB, OECF, IDA বিশ্বব্যাংক। ১৯৯৪ সালের ১০ই এপ্রিল তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এই সেতুর প্রথম ভিত্তি প্রস্তর স্থাপনের উদ্বোধন করেন। এবং এই সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হয়েছে ২৩ শে মার্চ ১৯৯৮ সালে। এবং সর্বসাকুল্যে করলে এই সেতুটি ২৩ জুন ১৯৯৮ সালে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করে সাধারণ জনতার মাঝে উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। এই সেতুর আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছিল ১২০ বছর।
বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য কত ও স্পেন কয়টি জেনে নিন
যমুনা সেতুর উপর দিয়ে নির্মিত হওয়া এই সেতু দক্ষিণ এশিয়ার বড় সেতুগুলোর মদ্ধ্যে একটি। ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের সেতুর নির্মাণ ব্যয় ৳৯৬২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ১৮.৫ মিটার প্রস্থ। বঙ্গবন্ধু সেতুর দৈর্ঘ্য কত ও স্পেন কয়টি জেনে নিন ভূমিকম্প ও বড় ধরনের দুর্যোগ
মোকাবেলার জন্য এই সেতুতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ মিটার লম্বা ও ২.৫ -৩.১৫ মিটার ব্যাসের ১২১ টি ইস্পাতের শক্ত খুটি। যেগুলি বসানোর জন্য ২৪০ টনের শক্তিশালী হাইড্রোলিক হাতুড়ি ব্যবহৃত হয়েছে। এই সেতুর মোট স্পেনের সংখ্যা ৪৯টি। ও মোট পিলারের সংখ্যা ৫০ টি।
শেষ কথা
এই সেতু নির্মাণের জন্য অনেক দ্বিধাদ্বন্দ্ব হয়েছিল রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। কিন্তু সব ধরনের বাধা বিপত্তি চড়াই-উৎরাই পার করে পূর্ণ প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় ১৯৯৮ সালের ২৩ জুন। মোট ছয়টি লেনে এই সেতু নির্মিত হয়েছে যার মধ্যে সাইকেল ও মানুষের জন্য আলাদা একটি লেন আছে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url