নিম পাতার উপকারিতা-চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার


সম্মানিত পাঠক নিম পাতা খুবই মূল্যবান একটি সম্পদ। নিম পাতার উপকারিতা ও চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার। নিম পাতার শিকড়ের ছাল, গাছের ছাল ফুল ও ফল সবকিছুতেই অনেক ঔষধি গুনাগুন রয়েছে। এজন্য বিজ্ঞ লোকেরা বলে বাড়ির উঠানে নিম গাছ হলে সে বাড়িতে কোন ধরনের
নিম পাতার উপকারিতা
ছোট বড় রোগ বালা মুসিবত ভিড়তে পারে না। নিম গাছ শুধু প্রকৃতিরই উপকারী বন্ধু না এটি আমাদের জন্য অনেক উপকারী। নিম পাতায় রয়েছে বিভিন্ন রোগের সংক্রমনের এন্টিফাঙ্গাল ভাইরাস নির্মূল করার শক্তি।

ভূমিকা 

বিভিন্ন গবেষণায় জানা গেছে নিমের পাতায় বিদ্যমান রয়েছে ই ফ্যাকলিস,এস মিটানোস,এস আরিয়াস এর মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এজন্য নিম পাতা ব্যবহার ও সেবন করলে আমাদের শরীরের অনেক ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এ সম্পর্কে জানতে আরো পড়ুন।

নিম পাতার উপকারিতা

নিম আমাদের অনেক উপকারী ও ভেষজ গুণ সম্পন্ন বৃক্ষ নিমের জনপ্রিয়তা ও এর ঔষধি গুনাগুন সম্পূর্ণ উপকার প্রাচীনকাল থেকে নিয়ে আসছে মানুষ। নিমের ফুল ফল পাতা বাকল সবকিছুই অনেক ভেষজ গুণাগুণ সমৃদ্ধ ঔষধি কাজে ব্যবহৃত হয় । নিমের গাছ খুব দ্রুত বর্ধনশীল । এটি মজারি ধরনের চিরহরিত বহু বর্ষজীবী বৃক্ষ । 

বাংলাদেশের সব জায়গায় নিম গাছ থাকলেও উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে নিম গাছ বেশি দেখা যায় । নিমকে অঞ্চল ভেদে একেক এলাকায় একেক নামে ডাকা হয় তামার , নিম্বু , ভেপা ইত্যাদি নাম গুলো খুব জনপ্রিয় । নিমের ফুল ফল ও বাকোলে অনেক ধরনের রাসায়নিক উপাদান রয়েছে অ্যালকালয়েড নিমবিডিন, নিম্বডল , সাললিন , জৈব এসিড , নিমবুলাইড 

বিভিন্ন রোগের ক্ষেত্রে নিম গাছ ও নিম পাতার উপকার হচ্ছে জীবাণুনাশক , রক্ত পরিষ্কার , কৃমি , চর্ম রোগ , ব্রণ , বসন্ত , এলার্জি , শরীর জ্বালাপোড়া করা , মুখে দুর্গন্ধ নাশক হিসেবে , দাঁতের রক্ত পড়া ও দাঁতের মাড়ি শক্ত করে তোলা । সবচাইতে বড় ঔষধি গুনাগুন সম্পৃদ্ধ গুণ হচ্ছে জন্ডিস রোগ প্রতিরোধ করা ।

চর্মরোগে নিম পাতার ব্যবহার

নিম পাতায় রয়েছে অনেক ঔষধি গুনাগুন এটি আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে । ১০ গ্রাম কাঁচা নিমের পাতা বড় এক গ্লাস সমপরিমাণ পরিপূর্ণ পানিতে একটি পাত্রে জাল করে নিতে হবে কিছু সময় পর আধা গ্লাস পানি আছে এরূপ পরিমাণে আসলে পানিটি নামিয়ে পাতা ছেকে নিয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে 

এবং এর সঙ্গে হালকা প্রয়োজনীয় চিনি মিশিয়ে পান করলে আমাদের শরীরের রক্ত পরিষ্কার হয়ে যাবে এবং বিভিন্ন ধরনের চর্ম রোগ প্রতিরোধ হবে । দেড় থেকে দুই মাস প্রতিদিন ২ থেকে ৩ বার এই নিয়মে সেবন করলে আমাদের শরীরের চর্মরোগ দূর হয়ে যাবে । পেটের ক্রিমিনাস এর জন্য নিমের ছালের গুড়া ৩ থেকে ৫ গ্রাম এর সঙ্গে সন্ধ্যব লবন মিশ্রণ করে 

প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে সকল ধরনের ক্রিমির উপদ্রব দূর হয়ে যাবে । নিমের পাতা ও ছাল প্রধান ভাবে ব্যবহৃত হয় চুলকানির চর্মরোগ ও খোস পাচড়া রোগ নির্মূলের জন্য সপ্তাহে চার থেকে পাঁচ দিন খালি গায়ে নিমের ছাল অথবা নিম গাছের শিঁকড় ভালো করে পিষে নিয়ে শরীরে মেখে অন্তত দুই ঘন্টা রাখার পরে গোসল করলে 

বা নিমপাতা দিয়ে সিদ্ধ করা পানি দিয়ে গোসল করলে এ ধরনের রোগ গুলো আমাদের শরীর থেকে নির্মূল হয়ে যাবে । নিমের পাতার বড়ি তৈরি করে রোদে শুকানোর মাধ্যমে অনেকদিন প্রক্রিয়াজাত করা যায় এবং এই বড়িগুলো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে 

শরীরের বিভিন্ন ধরনের রোগ খোস পাচড়া দূর হয়ে যাবে । এবং নিমপাতা কড়াইয়ে ভেজে নিয়ে গুড়া করে নিয়মিত ভাতের সঙ্গে খেলে শরীরের সকল ধরনের চর্মরোগ দূর হয়ে যাবে । 

চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা

বর্তমান সময়ে চুল ঝরে যাওয়া একটি বড় ধরনের সমস্যা । ছোট বড় তাই সব ধরনের মানুষের এই সমস্যা আছে। চুলের জন্য নিম পাতার উপকারিতা জেনে নিন । মাথায় শ্যাম্পু ব্যবহার করার সময় নিমের পাতা সেদ্ধ করা পানি দিয়ে হালকা করে মেসেজ করলে 

এর কিছুক্ষণ পর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললে চুলের সব ধরনের খুশকি দূর হয়ে যায় । প্রতি সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন কাঁচা নিমের পাতা ভালো করে পিষে চুলের মধ্যে মেসেজ করে লাগাতে হবে এর কিছু সময় পর অন্তত ১ ঘন্টা পরে ভালোভাবে গোসল করে চুল ধুয়ে ফেলতে হবে । এভাবে কয়েক সপ্তাহ করার ফলে আপনার চুলের গোড়া অনেক শক্ত হয়ে যাবে 

 নিম পাতার রসের সংগে মধু  মিশিয়ে প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত তিন থেকে চার দিন ব্যাবহার করতে হবে এর কিছু সময় বা ৩০ মিনিট পর শ্যাম্পু দিয়ে গোসল করে চুল ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিতে হবে এর ফলে চুল আরও শক্ত সুন্দর ও উজ্জ্বল হয়ে উঠবে । 

অল্প কিছু পরিমাণ টক দইয়ের সাথে এক চামচ লেবুর রস , এক চামচ নিম পাতার রস ও এক চামচ আমলকির রস একসঙ্গে মিক্স করে নিয়ে প্রতি সপ্তাহে ২ থেকে ৩ দিন চুলে লাগাতে হবে এর ৩০ মিনিট পর মাথায় শ্যাম্পু করে চুল ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে এতে চুলের গোড়া আরো মজবুত হবে চুল ঝরা রোগ প্রতিরোধ করবে । 

কাঁচা নিম পাতার পেস্ট তৈরি করে মাথার মাঝখানে ভালো করে ম্যাসেজ করতে হবে প্রতি সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন অন্তত দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত এতে চুলের উকুন দূর হয়ে যাবে ।

নিম পাতা দিয়ে ত্বক ফর্সা হওয়ার উপায় জানুন

ত্বকের যত্নে নিম পাতার ব্যবহার আদিকাল থেকে হয়ে আসছে । নিম পাতা দিয়ে ত্বক ফর্সা হওয়ার উপায় জানুন । আমাদের ত্বকের দাগ নির্মূল করার জন্য নিম গাছের পাতা ও এর ছাল কার্যকরী ভূমিকা পালন করে । এটি আমাদের ত্বকের ময়েশ্চারাইজার বৃদ্ধি করে । নিম পাতা কাঁচা হলুদ বেটে প্রতি সপ্তাহে ২ দিন আমাদের মুখের 

ত্বকে লাগিয়ে এর কিছু সময় পর পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে এভাবে বেশ কয়েকদিন করলে আমাদের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে এবং সব ধরনের কালো দাগ দূর হয়ে যাবে । নিম গাছের পাতা ও ছাল ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস বিরোধী । এজন্য ত্বকের সুরক্ষায় এর জুড়ি মেলা ভার । প্রতিদিন নিম পাতা ও কাঁচা হলুদের পেস্ট তৈরি করে 

আমাদের মুখের ত্বকে লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা অনেক গুণ বেড়ে যাবে ও স্কিনটোন বৃদ্ধি পাবে । তবে গ্রীষ্মের সময় হলুদ ব্যবহার করে রোদের মধ্যে না বেরোনোই ভালো নইলে ত্বকের অনেক ক্ষতি হতে পারে ।

ব্রণের জন্য নিম পাতার সঠিক ব্যবহার 

বাজারের অনেক দামী দামী ফেসওয়াস ইউজ করার জন্য আমাদের মুখের ত্বকে অল্প বয়সে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি হয় এর মধ্যে প্রধান হচ্ছে ব্রণ । ব্রণের জন্য নিম পাতার সঠিক ব্যবহার। বাজারের সমস্ত দামি দামি ফেসওয়াশ ইউজ না করে আমরা ঘরোয়া পদ্ধতিতে খুব সহজেই এসব সমস্যা দূর করতে পারবো । 

ব্রণ দূর করার জন্য প্রতিদিন কাঁচা নিমপাতা বেটে আপনাদের ত্বকে লাগাতে পারবেন এতে আপনাদের ত্বক থেকে ব্রণের সমস্যা দূর হয়ে যাবে এছাড়াও নিম পাতা পিষে নিয়ে ছোট ছোট বড়ি করে রোদে শুকিয়ে নিতে হবে এবং এই বড়িগুলো বেশিদিন সংরক্ষণের জন্য ভালো বইয়ামে রেখে দিতে হবে এবং প্রতিদিন সকালে একটি করে খেলে 

আমাদের ত্বকের সব ধরনের সমস্যা দ্রুত নির্মূল হয়ে যাবে । আমাদের মুখের ত্বকে খুব বেশি পরিমাণে ব্রণ হলে কাঁচা নিমপাতা পিষে সেই স্থানে ভালো করে লাগাতে হবে এর ফলে সেই জায়গাটির ব্রণ খুব দ্রুত দূর হয়ে যাবে ।

খালি পেটে নিম পাতার রসের উপকারিতা ও অপকারিতা

আদিকাল থেকে নিম পাতা বিশেষভাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। নিম পাতা ব্যবহারের জন্য কোন ধরনের সাইড ইফেক্ট হয় না আমাদের শরীরে। খালি পেটে নিম পাতার রসের উপকারিতা ও অপকারিতা। নিমের পাতার মধ্যে থাকা বিভিন্ন ধরনের ঔষধি গুনাগুন আমাদের শরীরের প্রবেশ করলে 

আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। প্রতিনিয়ত ফাস্টফুড ও উচ্চ কোলেস্টেরল যুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগের সৃষ্টি হচ্ছে এর মধ্যে প্রধান ডায়াবেটিস। সারা পৃথিবী সহ আমাদের দেশে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এজন্য সাধারণ মানুষ এখন ভেষজ ওষুধী গুণের পেছনে ছুটছে।
  • এজন্য প্রধান হলো প্রতিদিন সকালে নিম পাতার রস খালি পেটে খেলে আমাদের রক্তে শর্করার মান নিয়ন্ত্রণ থাকে।
  • নিমের পাতার অনেক বড় একটি ওষুধি গুণ আছে যে আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে শরীরের রক্ত পুরোপুরি ভাবে পরিষ্কার করতে সক্ষম। এটি আমাদের শরীরে রক্তের খারাপ টক্সিন বের করে রক্তে ডিটক্সিফাই বৃদ্ধি করে। এজন্য আমাদের রক্ত বিশুদ্ধ থাকলে কোন ধরনের রোগের সংক্রমণ আমাদের শরীরে সৃষ্টি হবে না
  • নিমের পাতায় রয়েছে বিভিন্ন ধরনের এসিডিটি নির্মূল উপাদান এজন্য প্রতিদিন সকালে সিদ্ধ করা নিম পাতার রস খেলে আমাদের পেটের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা পেট ব্যাঁথা বদহজম গ্যাস্ট্রিক সকল ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যায়।
  • প্রতিদিন সকালে নিমপাতা বেটে এর রস বের করে নিয়ে এক গ্লাস করে খেলে আমাদের শরীরের সকল ধরনের রোগের সংক্রমণ নির্মূল হয়ে যাবে।
  • প্রতিদিন সকালে অল্প কিছু পরিমাণে নিম পাতার রস ও মধু এক গ্লাস পানিতে মিক্স করে নিয়ে খেলে আমাদের শরীরের স্নায়বিক অনেক দুর্বলতা কেটে যাবে। এতে আমাদের শরীর ও মন অনেক উজ্জীবিত থাকবে।
  • আমাদের শরীরে উচ্চ কোলেস্টরলের মাত্রা হ্রাস করানোর জন্য নিম পাতা কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। এজন্য প্রতিদিন নিম পাতার রস সেবন করলে আমাদের শরীরে উচ্চ কোলেস্টোরেল  ধ্বংস করে কোলেস্টোরেলের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে আসবে।

ও অপকারিতা

সব কিছুরই একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ রয়েছে এজন্য নিম পাতা খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক না। এজন্য সব সময় অল্প পরিমাণে নিম পাতা ও নিম পাতার রস খাবেন। তবে কোন সমস্যা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিম পাতার রস সেবন করা ভালো।

শেষ কথা

নিম পাতার রসের বিশেষ গুনাগুন সম্পর্কে আপনারা জেনে গেলেন। এটি নিয়ম মেনে সেবন করা যায় তবে খুব বেশি পরিমাণে সেবন করার ইচ্ছা থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিবেন। কারণ কোন কিছু খুব বেশি পরিমাণে খাওয়া ঠিক না।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url