ছারপোকা তাড়ানোর উপায়-ছারপোকা কামড়ালে কি হয় জানুন


প্রিয় পাঠক ছারপোকা তাড়ানোর উপায় ও ছারপোকা কামড়ালে কি হয় জানুন। এইপোকা মূলত দেখতে ছোট চ্যাপ্টা আকৃতির হয়ে থাকে। এই পোকাটি আমাদের বিছানার তলে খাটের নিচে বিভিন্ন স্থানে বাসা বেঁধে থাকে
ছারপোকা তাড়ানোর উপায় জানুন
আমরা যখন রাতে বিছানায় ঘুমোতে যাই ঘুমোনোর পরেই শুরু করে তাদের রক্ত খাওয়া যুদ্ধের মিশন। আমাদের শরীরের ত্বকের চামড়া গুলো লাল করে ফেলে কিন্তু আমরা বুঝতেই পারি না।

ভূমিকা

ছারপোকাকে ইংরেজিতে Bed Bugs বলা হয় এই পোকাটি মূলত সৃষ্টি হয়ে থাকে অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন নোংরা বাড়িঘর ও বিছানার চাদর লেপ তোষক কম্বল এসব স্থানে। আর এটি একবার তৈরি হলে খুব সহজে নির্মূল হতে চাই না। তবে একে নির্মূল করার উপায় সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে জানতে নিচে আরও পড়তে থাকুন।

ছারপোকা তাড়ানোর উপায় কি

আমাদের বাসা বাড়িতে মশার মতো এইপোকাও বাসা বেঁধে থাকে। তবে মশার ক্ষেত্রে কোয়েল কিংবা মশারি টানিয়ে ঘুমালে এর হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়। কিন্তু এইপোকার ক্ষেত্রে খুব সহজে রেহাই পাওয়া যায় না কেননা এইপোকা বাসা বাঁধে সব সময় বিছানার নিচে ঘরের কোণে। ছারপোকা হল এক ধরনের পতঙ্গ বা পোকা। 

আমাদের ঘরের বিছানার বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র যেমন বিছানার নিচে বালিশের মধ্যে মশারির মধ্যে এইপোকার  উপদ্রব বেশি হয়ে থাকে। এছাড়াও আমাদের বাসা বাড়ির সোফা এবং বিভিন্ন ধরনের পুরাতন আসবাব পত্রের মধ্যে আস্তানাগুলো গেড়ে থাকে। এইপোকার উপদ্রব হয়ে থাকে বিশেষত অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন বিছানা হলে।

তবে এই সমস্যাটি হলে খুব সহজে ভালো হতে চাই না কিন্তু বিশেষ কিছু উপায় আছে যেগুলি অবলম্বন করলে খুব দ্রুত এইপোকা  নির্মূল হবে উপায়গুলি হলো
  • এইপোকা বেশি তাপ সহ্য করতে পারে না এজন্য নিয়মিত ঘরের বিছানা লেপ তোষক বালিশ চাদর ২ থেকে ৩ দিন পর পর রোদে শুকাতে দিতে হবে। এবং সপ্তাহের ২ বার বিছানার চাদর পরিবর্তন করতে হবে। এবং রুমের মধ্যে খাট বা চৌকিকে দেয়ালের সঙ্গে না লাগিয়ে একটু ফাঁকা করে রাখতে হবে।
  • আকাশে রোদ না থাকলে বিছানার চাদর লেপ তোষক বালিশ কম্বল অথবা সোফার গদি গরম পানিতে সিদ্ধ করে ধুয়ে নিতে হবে।
  • এই পোকা তাড়ানোর প্রধান মাধ্যম হল alt অ্যালকোহল । এজন্য সপ্তাহে দুই দিন বিছানার স্থানগুলোতে এবং ঘরের বিভিন্ন জায়গাগুলোতে অ্যালকোহল স্প্রে করে দিতে হবে তাহলে খুব দ্রুত এইপোকা ঘর এবং ঘরের বিছানা থেকে পালাবে।
  • এই পোকা দ্রুত তাড়ানোর জন্য মাঝেমধ্যে ঘরের বিভিন্ন জিনিসপত্র কেরোসিনের প্রলেপ দিতে হবে এতে এইপোকা খুব শীঘ্রই পালিয়ে যাবে।
  • ঘরের যে স্থানগুলোতে এইপোকা আছে সেই স্থানগুলোতে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করে দিতে হবে। এটি নিয়মিত স্প্রে করতে হবে তাহলে খুব শীঘ্রই এই পোকা নির্মূল হয়ে যাবে।
  • পুদিনা পাতা এইপোকা দূর করতে বিশেষভাবে কাজ করে থাকে এর গন্ধ এই পোকা একটু সহ্য করতে পারে না। এজন্য ঘরের যেসব স্থানে এই পোকা বেশি সেই সব স্থানে পুদিনা পাতা রেখে দিতে হবে।
  • এই পোকা মারার প্রধান একটি মাধ্যম হল প্রাকৃতিক কীটনাশক ব্যবহার করা। রুমের যেসব স্থানে এই পোকা থাকে যেমন বিছানার তলে সোপায় কম্বল তোষক এসব জিনিসপত্র কীটনাশক প্রে অথবা ছিটিয়ে দিতে হবে। তাহলে এই পোকা খুব দ্রুত দূর হয়ে যাবে।
  • এইপোকার সবচেয়ে বেশি পছন্দের স্থান হচ্ছে অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন জায়গা। এই জন্য ঘরের মধ্যে যেসব স্থানে অপ্রয়োজনীয় অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন জিনিসপত্র রয়েছে বা খাটের তলে বিভিন্ন ধরনের অপরিষ্কার ময়লা রয়েছে সেগুলো খুব দ্রুত সরিয়ে ঘর সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • এইপোকা দূর করতে গুরুত্বপূর্ণভাবে কাজ করে থাকে ন্যাপথলিন বড়ি। এই বড়িটি মাসে ২ থেকে ৩ বার গুঁড়ো করে বিছানার সব স্থানে ও ঘরের সব কোণে ছিটিয়ে দিতে হবে তাহলে খুব দ্রুত এইপোকা পালিয়ে যাবে।

ছারপোকা কামড়ালে কি হয় জানুন

এই পতঙ্গ মানুষের জন্য খুবই মারাত্মক কোন পোকা বা পতঙ্গ না। এটি কামড়ালে আমাদের দেহের ত্বকে ফুসকুড়ির মত বিভিন্ন ধরনের দাগের সৃষ্টি হয়। এবং যেসব ব্যক্তিদের এলার্জি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে একটু গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য এই পোকা কামড়ালে খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে। এই পোকা আমাদের দেহে কোন 


রোগ ছড়ায় না তবে এই পোকাটি আমাদের ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায় এজন্য সবচাইতে বেশি বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই পোকা কামড় আমাদের শরীরে দু'রকমভাবে প্রভাব ফেলে কোন কোন ব্যক্তি খুব সহজেই এর কামোড় বুঝতে পারে আবার কোন কোন ব্যক্তি এর কামড় বুঝতেই পারেনা। তবে বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এই পোকার  কামড় মানুষের শরীরে চর্মরোগ সৃষ্টি করতে পারে।

এজন্য ছারপোকা কামড়ালে করণীয়

সাধারণত এই পোকা কামড়ালে এর প্রভাব সপ্তাহখানেক এর মধ্যেই চলে যায় এবং কামড়ের দাগ গুলো অল্প কিছুদিনের মধ্যে মিলিয়ে যায় শরীর থেকে। তবে যুক্তরাজ্যের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা সংস্থা মৌলিক কিছু বিষয় মেনে চলার জন্য পরামর্শ দিয়ে থাকেন এগুলো হল
  • আক্রান্ত জায়গা নিয়মিত পরিষ্কার রাখা
  • ঠান্ডা কোন ভেজা কাপড় দিয়ে ক্ষতস্থানগুলো ঢেকে রাখা
  • অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম ও লোশন ব্যবহার করতে হবে
  • আক্রান্ত স্থানে খুব বেশি চুলকানো যাবে না
  • এবং এইপোকা দমনে যেসব স্থানগুলোতে এই পোকা হয়েছে সেই সব স্থানগুলোতে ইনসেক্টিসাইড কীটনাশক স্প্রে করতে হবে নিয়মিত।

চিরতরে ছারপোকা দূর করার উপায়

এই পোকা এমন একটি বস্তু যেটা পুরোপুরি ভাবে নির্মূল করা খুবই কঠিন একটি বিষয়। তবে বিশেষ কিছু নিয়ম মেনে চললে খুব দ্রুত এগুলি দমন করা সম্ভব। চিরতরে এই পোকা দূর করার উপায় হল
  • নিয়মিত ঘরবাড়ি এবং বিছানা জায়গা গুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে তাহলে খুব দ্রুত এটি নির্মূল হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
  • যেসব স্থান বা কাপড়-চোপড়ে এইপোকা হয় সেসব কাপড়চোপড় বিছানার জিনিসগুলোকে নিয়মিত গরম পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর কড়া রোদে শুকাতে হবে।
  • যেসব কাপড়-চোপোড়ে বা বিছানার চাদরে এই পতঙ্গ থাকবে সে সব জিনিসগুলোকে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে চার থেকে পাঁচ দিন ফ্রিজের মধ্যে রেখে দিতে হবে।
  • আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে ব্রিটিশ পেস্ট কন্ট্রোল অ্যাসোসিয়েশন নাটালি বোনকে বলেছেন। আমাদের ঘরের মধ্যে এইপোকার  উপদ্রব তৈরি হলে সেটি নিয়ে লজ্জিত না হয়ে অতি দ্রুত প্রতিকার করার চেষ্টা করতে হবে এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে।
  • এজন্য পোকামাকড় নিরোধক কোম্পানির সহায়তা গ্রহণ করতে হবে
চিরতরে ছারপোকা নির্মূল করার উপায় 
  • এই পতঙ্গ দমনের ঔষধ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করে নিতে হবে । এজন্য প্রয়োজনীয় বিশেষ কিছু জিনিসপত্র লাগবে সে বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য নিচে দেওয়া হলঃ
  • এইপোকা নির্মূল করার জন্য প্রথমে একটি পাত্রে এক থেকে দুই লিটার পানি নিতে হবে এবং খুব বেশি পরিমাণে এইপোকা থাকলে প্রয়োজন অনুযায়ী পানি নিতে হবে।
  • এবার পাত্রটিতে ৫০০ গ্রাম পানি নিবেন এই পানিতে ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম লেবুর রস দিতে হবে । লেবু না থাকলে সে ক্ষেত্রে ভিনেগার ব্যবহার করতে পারবেন । তবে চেষ্টা করবেন লেবুর রস দেওয়ার জন্য কেননা এই পোকা দমনে লেবুর রস গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি ঘরের যেসব স্থানে এইপোকা থাকবে সে সব স্থানগুলোতে ছিটিয়ে দিতে হবে তাহলে খুব দ্রুত এই পোকা চিরতরে নির্মূল হয়ে যাবে

ছারপোকা দমনের ঔষধ এর নাম

আমাদের বাসা বাড়িতে একবার এই পতঙ্গ সৃষ্টি হলে খুব সহজে তা দমন করা যায় না। এমন বিরক্তিকর একটি পোকা যা আমাদের রাতের ঘুম হারাম করে দেয় সেজন্য আমাদের মানসিকভাবে অনেক অশান্তি সৃষ্টি হয়ে যায় ঠিক মত ঘুম না হলে। সেজন্য এটি আমাদের বাড়ির যে কোন স্থানে হলে খুব দ্রুত নির্মূল করতে হবে। ছারপোকা দমনের ঔষধ এর নাম জানুন
  • তাসলা ১০ ডব্লিউপি- intefa company
  • Bed Bugs Killer 250 ml- ছার পোকা দমনে ১০০% কার্যকরি এর মূল্য 
  • ইন্ডিয়ান অ্যালমিনিয়াম ফসফেট ট্যাব্লেট- এর প্রতিটি টিউবের দাম । এই পণ্য অনলাইন অফলাইন দুই জায়গায় পাওয়া যায় বিশেষ করে ।
  • ZoomX ম্যাজিক পাউডার- আমাদের বাসা বাড়িতে সব স্থানগুলোতে খুব বেশি পরিমাণে এই পতঙ্গ সেইসব স্থানগুলোতে এই পাউডার ছড়িয়ে দিতে হবে তাহলে খুব দ্রুত এই পোকারা পালিয়ে যাবে। এটি নিয়মিত মাসে তিন থেকে চার বার ছড়িয়ে দিতে হবে তাহলে পুরোপুরিভাবে এই পতঙ্গ দমন হয়ে যাবে। 
  • MR. LEI-ছারপোকা দমনের মেডিসিন 400 ml ।

ছারপোকা মারার স্প্রে এর নাম

ছারপোকা মারার স্প্রে এর নাম জানুন।
  • ঘরের যেসব স্থানে এই পতঙ্গ উপদ্রব সৃষ্টি হবে সেইসব স্থানগুলোতে অ্যালকোহল স্প্রে করে দিতে হবে। অ্যালকোহল অনেক ভয় পায় এইপোকা এটি স্প্রে করলে খুব দ্রুত ঘর ছেড়ে পালিয়ে যাবে।
  • ঘরের যেসব জায়গাগুলোতে এই পতঙ্গ অনেক বেশি বাসা বেধেছে সেসব জায়গা গুলোতে ল্যাভেন্ডার অয়েল স্প্রে করতে হবে এটি প্রতিদিন স্প্রে করলে খুব দ্রুত এইপোকা ঘর থেকে পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যাবে।
  • লেবুর রস ভিনেগার ও কেরোসিন তেল একসঙ্গে মিক্স করে স্প্রে করলে এই পোকার বংশ পুরোপুরি নির্বংশ হয়ে যাবে খুব দ্রুত।

বিছানায় ছারপোকা কেন হয়

বিছানায় ছারপোকা কেন হয় জেনে নিন। এই পতঙ্গ শুধু অপরিষ্কার অপরিচ্ছন্ন বিছানায় হয় এ বিষয়টা একেবারেই ঠিক না। যে কোন বিছানাতেই এই পোকার  উপদ্রব হতে পারে। এই পতঙ্গএমন একটি পোকা যা মানুষের ঘুমানো অব্দি বিছানায় অপেক্ষা করে একবার ঘুমিয়ে পড়লে তারপর রক্ত খাওয়া শুরু করে। অনেকে ভুল ধারণা রাখেন যে উকুনের মতো 

এই পতঙ্গ মানুষের শরীরে থাকে কিন্তু এই বিষয়টি পুরোপুরি ভুল। এই পোকা এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার জন্য আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র যেমন জামা কাপড় ব্যাগ এসব কিছু ব্যবহার করে থাকে। এই পোকাগুলি এতটাই ভয়ানক যে এরা এক দেশ থেকে ব্যাগে করে অন্য দেশেও চলে যেতে পারে। এ পোকা হেঁটে হেঁটে 

বহুদূর যেতে পারে এবং রক্ত না খেয়ে একটানা ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত বাঁচতে পারে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আমাদের বাড়ির ঘরের বিছানার জিনিসপত্র লেপ-তোশক কাঁথা কম্বল বালিশ এসব স্থান গুলোতে এবং মশারি চাদর ও খাটের নিচে ময়লা আবর্জনা থাকলে এই পতঙ্গ সৃষ্টি হয় এজন্য নিয়মিত এইসব জিনিস গুলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করবেন।

শেষ কথা

এই পতঙ্গ এমন একটি বিরক্তিকর পোকা যা একবার আমাদের বাসা বাড়ির বিছানায় হলে আমাদের রাতের ঘুম হারাম হয়ে যায়। এজন্য এই পোকাটি হলে খুব দ্রুত নির্মূল করার চেষ্টা করতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url