ডায়াবেটিস কেন হয়-ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ


প্রিয় পাঠক ডায়াবেটিস কেন হয় ও ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ জানুন। অনেক বেশি সময় ধরে শরীর খারাপ থাকলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়লে খুব দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে । ডাক্তারের কাছে গেলে বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে তারা বুঝতে পারেন যে ডায়াবেটিস
ডায়াবেটিস কেন হয় জানুন
রোগ আমাদের শরীরে অনেক আগে থেকেই বাসা বেধেছে। তবে এ রোগ নিয়ে ভয়ের কোন কারণ নেই এর সঠিক চিকিৎসা ও নিয়ম মেনে খাবার খেলে এই রোগ থেকে নিস্তার পাওয়া যায়।

ভূমিকা

এইরোগ আমাদের শরীরে বাসা বাঁধলে আমাদের স্বাস্থ্যের বেশ কিছু সমস্যার সৃষ্টি হয় অনেক সময় ধরে শরীরের রক্ত শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে রক্তনালি উপরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আর রক্তনালী সঠিকভাবে কার্যসম্পাদন না করতে পারলে শরীরের বাকি অংশগুলোতে রক্ত সঠিকভাবে পরিচালনা হতে পারে না এ সম্পর্কে জানতে নিচে আরও পড়ুন।

ডায়াবেটিস কেন হয়

আমাদের শরীরে মাংসপেশী টিস্যু ও মস্তিষ্কের সবগুলো কোষের শক্তির উৎস হিসেবে গ্লুকোজের প্রয়োজন। রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ইনসুলিন হরমোন দ্বারা পরিচালিত হয়। যা অগ্নাশয় এর মাধ্যমে মিশ্রিত হয় এইরোগে আক্রান্ত রোগীদের অগ্নাশয় দ্বারা ইনসুলিন নিঃসৃত উপাদান পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে বা কোষ গুলি

ইনসুলিন বিরোধী হয়ে ওঠে এর ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে শর্করা মান বেড়ে যায় যার ফলে সৃষ্টি হয়  এই রোগের। এই রোগ তিন ধরনের হয়ে থাকে
  1. টাইপ-1 ডায়াবেটিস
  2. টাইপ-2 ডায়াবেটিস
  3. গর্ভকালীন অবস্থায় ডায়াবেটিস
এটি হওয়ার প্রধান কারণ গুলি হলঃ
  • অনেক বেশি পরিমাণে শরীরে ওজন থাকা
  • বয়স ৪০ থেকে ৪৫ এর বেশি অতিক্রম করলে
  • পারিবারিক ভাবে কোন সদস্যর পূর্বে এইরোগে আক্রান্ত হওয়ার কোন ইতিহাস থাকলে
  • গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের আক্রান্ত পূর্ববর্তী ও বংশগত কোন ইতিহাস থাকলে
  • শরীরে বিভিন্ন ধরনের রোগ আছে যেমন পলিসিস্টিক ডিম্বাশয় সিনড্রোম ও অগ্নাশয় রোগ
  • জীবনযাত্রার মান অনেক খারাপ থাকলে

ডায়াবেটিস কত হলে বিপদ

কিছু গবেষণা থেকে জানা যায় রক্তের শর্করার মান বৃদ্ধি পেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে আবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। তবে বর্তমান সময়ে সবচাইতে বেশি যে রোগটি বিস্তার লাভ করেছে সেটি হল ডায়াবেটিস। এইরোগ একসময় মহামারীতে রূপান্তর হবে সেটা খুব দূরে নয় ।

বর্তমান সময়ে প্রতি ৫ জন মানুষের মধ্যে ১ জন এইরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর মূলে রয়েছে অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য মানসিক স্ট্রেস ও চাপ শারীরিকভাবে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে দিচ্ছে আমাদের শরীরের ভিতরে অনেক বড় বড় অংশগুলো যেমন কিডনি হার্ট লিভার ফুসফুস । এর পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের

এইরোগের প্রধান কারণ হলো আমাদের রক্তের শর্করার মান কম বেশি হলেই এই রোগটি আমাদের শরীরে বাসা বাঁধে। আমাদের শরীরে রক্তের শর্করার মান ৬.৫ % এর বেশি হলে আমাদের শরীরে এইরোগ আক্রান্ত হয়েছে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকটা বেড়ে যায়।

এর নিচে হলে এই রোগ নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। একজন সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে ৫.৭ % রক্তে শর্করার মান থাকা প্রয়োজন এই মাত্রা বেশি হলে এইরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। কেননা আমাদের রক্তের শর্করার মাত্রা ৭.০% এর উপরে উঠে গেলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এজন্য সব সময় প্রয়োজন আমাদের রক্তের শর্করার মান ৬.৫% এর নিচে রাখা।

ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে মানুষ মারা যায় জানুন

এটি দীর্ঘমেয়াদি একটি রোগ এ রোগে আক্রান্ত হলে অগ্নাশয় ও প্যানক্রিয়াস নিয়মমাফিক শরীরে ইনসুলিন তৈরি করতে পারেনা ইনসুলিন একটি হরমোন যা আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে হাইপার গ্লাইসেমিয়া সৃষ্টি হয় যা অনিয়ন্ত্রিত এইরোগ আক্রান্ত হওয়ার প্রধান লক্ষণ। ডায়াবেটিস কত পয়েন্ট হলে মানুষ মারা যায় জানুন
  • ডায়াবেটিস ভরা পেটে 140mg-dl এর চেয়ে বেশি হলে অনেক ভালো। তবে এইরোগ সাধারণত 40mg-dl এর কম ও 400mg-dl এর বেশি হলে রোগী স্ট্রোক করে মারা যেতে পারে।
  • এই রোগ কোন মরণব্যাধি না এ রোগ হলে সঠিক নিয়মে ওষুধ সেবন ও জীবন যাপন করলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকা যায় । মহান আল্লাহতালা আমাদের মৃত্যু কখন নিশ্চিত করেছেন তিনি একমাত্র জানেন এসব অসুখ উসিলা মাত্র । মৃত্যুর সময় হলে সকলকে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করতে হবে।

খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল জানুন

খালি পেটে ডায়াবেটিস কত হলে নরমাল জানুন। খালি পেটে আমাদের রক্তের সুগারের মাত্রা ৫.৫% আশে পাশে থাকলে অনেক ভালো। কিন্তু ৫.৫% থেকে ৬.৯% এর মধ্যে থাকলে এই অবস্থাকে ফ্রি ডায়াবেটিস বলা হয়। ৭ পয়েন্ট এর উপরে চলে গেলে এইরোগ নিশ্চিত ভাবে ধরে নেওয়া হয়। এইরোগ বর্তমানে প্রধান একটি সমস্যা ।
  • হরমোনজনিত মেটাবলিক ডিজঅর্ডার। শরীরে ইনসুলিন রয়েছে কিন্তু পর্যাপ্ত পরিমাণে কাজ করতে পারেনা বা ইনসুলিন পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। এই রোগ মূলত চার স্টেজের হয়ে থাকে টাইপ ১ টাইপ ২ জিসটেনশনাল ও অন্যান্য ধরনের। খালি পেটে আমাদের সুগারের মাত্রা ৫.৫% এর আশেপাশে থাকা অনেক ভালো।
  • কিন্তু এই মাত্রা যদি ৬.৯ % থেকে ৭ পার্সেন্ট এর উপরে উঠে যায় তাহলে নিশ্চিতভাবে এইরোগ অনেক বেশি বলে জানা যায়।

সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস হয় জানুন

আমাদের শরীরে সুগার লেভেল পরিবর্তনের জন্য বেশ কিছু মাধ্যম কাজ করে। সুগার লেভেল কত হলে ডায়াবেটিস হয় জানুন। প্রয়োজনের চেয়ে অত্যাধিক মাত্রায় মিষ্টি জাতীয় দ্রব্য ও তেল জাতীয় দ্রব্য খেলে আমাদের শরীরে ব্লাড সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পায় । শারীরিক পরিশ্রম অনেক বেশি করলে সুগার লেভেল অনেকটা কম থাকে এবং পরিশ্রম না করলে

সুগারের মাত্রা বৃদ্ধি পেয়ে যায়। আমাদের শরীরে সুগারের মাত্রা পরিমাপ করা হয় মিলিগ্রাম ও ডেসিলিটার এককে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির ক্ষেত্রে শরীরে ব্লাড সুগারের মাত্রা ৯০-১০০ মিলিগ্রাম/ ডেলি। কিন্তু কোন ব্যক্তি দীর্ঘ সময় ধরে প্রায় আট ঘন্টা ধরে না খেয়ে থাকলে তার ব্লাড সুগার মাত্রা ৭০-৯৯ মিলিগ্রাম নেমে যেতে পারে।

পরিপূর্ণ সুস্বাস্থ্য ব্যক্তি পরিমিত খাবার খাওয়ার দুই ঘন্টা পরে পরে এই টেস্ট করলে সুগার লেভেলের মাত্রা ১৪০ মিলিগ্রাম হয়ে থাকে। এইরোগে আক্রান্ত রোগীর নরমাল ব্লাড সুগার লেভেলের মাত্রা ১৮০ মিলিগ্রাম বা এরকম হতে পারে। এই পরীক্ষাটি গ্লুকোমিটারে পরিমাপ করলে একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি খাবারের আগে ৪ থেকে ৬ পয়েন্টে থাকে।

ও খাবারের ২ ঘন্টা পর মাপ করলে ৮ পয়েন্টের নিচে থাকলে তা স্বাভাবিক মাত্রায় থাকে। হাসপাতালের ল্যাবে এইরোগ পরীক্ষা করা হলে খালি পেটে সুগারের মাত্রা ৫.৫ % এর আশে পাশে থাকলে অনেক ভালো কিন্তু সুগারের মাত্রা ৬. ১% থেকে ৬.৯% থাকলে এই অবস্থাকে প্রি ডায়াবেটিস বলে কিন্তু এর মাত্রা যদি ৭% এর উপরে চলে যায়

তাহলে এইরোগে আক্রান্ত হবে। ভরা পেটে খাবারের দুই ঘন্টা পর সুগার লেভেল পরীক্ষা করলে এর মাত্রা ৭.৮% এর উপরে থাকলে একে প্রি ডায়াবেটিস বলে। কিন্তু ১১.১% এর ওপরে চলে গেলে একে অত্যাধিক মাত্রায় ডায়াবেটিস হিসেবে ধরা হয়।

ডায়াবেটিস হলে যে ১০ টি সমস্যা হয় জেনে নিন

এই রোগ এমন একটি ব্যাধি যার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বয়ে বেড়াতে হয়। এই রোগাক্রান্ত হয়ে পুরো বিশ্বে বছরে ১০ লাখের বেশি মানুষ মৃত্যুবরণ করছে। ডায়াবেটিস হলে যে ১০ টি সমস্যা হয় জেনে নিন। আমাদের শরীরে রক্তের চিনির উপাদান কে গ্লুকোজ বলে এই চিনি যখন আমাদের শরীরের রক্ত ভাঙতে ব্যর্থ হয় তখন তা

এইরোগে রূপান্তর লাভ করে এর ফলে অনেক ধরনের বড় ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হয় যেমন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক।
  • এর ফলে মানুষ অন্ধত্ব লাভ করতে পারে ।
  • এই রোগে আক্রান্ত হলে আমাদের কিডনি ড্যামেজ হওয়ার পাশাপাশি বিকলাঙ্গ হতে পারে।
  • যেকোনো বয়সের ব্যক্তিদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে
  • মিষ্টি জাতীয় দ্রব্যের প্রতি আকর্ষিত হয়ে পড়া
  • চোখে কম দেখতে পাওয়া
  • কোন কারণ ছাড়া শরীরের ওজন কমে যাওয়া
  • ক্ষুদা বেড়ে যাওয়া
  • ঘন ঘন প্রস্রাব ও পিপাসা বেড়ে যাওয়া
  • শরীরে কোন অংশে কেটে গেলে সেই ক্ষত দীর্ঘদিন পর্যন্ত না সারা
  • শরীর দুর্বল হয়ে মাথা ঘোরা ভাব তৈরি হওয়া
  • চামড়ার উপরে ত্বক খুস্কো ও রুক্ষ চুলকানি ভাব তৈরি হওয়া
  • নিয়ম মেনে খাবার না খেলে শরীরের শর্করার মাত্রা কমে হাইপো হওয়া।
  • সারা পৃথিবীতে এই রোগে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪২ কোটির উপরে বছর আগের তুলনায় এই সংখ্যা প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ডাব্লু এইচ ও তথ্য মতে।

লেখকের মন্তব্য

এই রোগ বর্তমান সময়ে একটি ঘাতক ব্যাধি হিসেবে রূপান্তরিত হয়েছে এ রোগটি হলে রোগীর মৃত্যু হবে না কিন্তু এর সঠিক নিয়ম মেনে চিকিৎসা ও খাবার গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে অনেক বড় ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে এজন্য এ রোগটি হলে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে গিয়ে চেকআপ করে নিয়মমাফিক ঔষধ খেতে হবে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url